Featured

Type Here to Get Search Results !

বন্যায় কুমিল্লার ৫ উপজেলার অর্ধশত ইটভাটার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি


নিজস্ব প্রতিবেদক: স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কুমিল্লার পাঁচ উপজেলার অর্ধশত ইটভাটার ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে। জেলার লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ ও বুড়িচং উপজেলার এসব ইটভাটার বেশিরভাগ ভাগই পানিতে তলিয়ে গেছে। তবে দাউদকান্দি, মেঘনা, হোমনা, তিতাস, ব্রাহ্মণপাড়া, চান্দিনা, মুরাদনগর উপজেলার ইটভাটাগুলোর তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

ক্ষতিগ্রস্ত ইটভাটার মালিকরা জানান, হঠাৎ পানি ঢুকে পড়ায় মেশিনপত্র, মূল্যবান দলিলাদি এমনকি ট্রাক-ট্রাক্টর-পিকআপ গাড়িগুলোও সরিয়ে নেয়া যায়নি। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। কাজ না করিয়েও শ্রমিকদের বেতন দিতে হচ্ছে। মানবিক কারণে তাদের খাবার-দাবারেরও ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি কুমিল্লা জেলা সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক, লাকসাম শাখার সভাপতি ও লাকসামের বাকই ব্রিকস ফিল্ডের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার ফিল্ডের মোল্ডিং মেশিন, ট্রাক্টর, পিকআপ, এক্সেভেটর, ইঞ্জিন ডুবে ১২ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। লাকসামের ৬টি ব্রিকস ফিল্ডের প্রায় ৭০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। মেশিনগুলো পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কয়েক গুণ বাড়বে। বর্তমানে শ্রমিকদের বসিয়ে রেখে বেতন ও খাবারের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ইট প্রস্তুতকারী মালিক সমিতি চৌদ্দগ্রাম শাখার সভাপতি ও কুমিল্লা জেলার সাংগঠনিক সম্পাদক রোটারিয়ান মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, আমার হাজেরা ব্রিকফিল্ডসহ উপজেলায় ৪০টি ব্রিকফিল্ডের প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মায়ের দোয়া ব্রিকস ফিল্ডের মালিক আবু ইউসুফ বলেন, উপজেলার ১৫টি ফিল্ডের অন্ততঃ দেড় কোটি টাকার ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

মনোহরগঞ্জ উপজেলার এশিয়া ব্রিকস ফিল্ডের মালিক কামাল হোসেন বলেন, উপজেলার ৪টি ব্রিকস ফিল্ডের প্রায় ৬০ লাখ টাকার মেশিনপত্রের ক্ষতি সাধিত হয়েছে।

বুড়িচং থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল হাসানাত খন্দকার জানান, এ উপজেলায় ২৪টি ইটভাটা রয়েছে। এর মধ্যে অতিমাত্রায় জলাবদ্ধতায় ভাটার কাঁচামালসহ মেশিনপত্রের ক্ষতি হয়েছে ১১টির। ৩টি ভাটার কাচামালসহ আনুষাঙ্গিক ক্ষতি হয়েছে। ইটভাটার প্রতিটি মেশিনের মূল্য ৫ লাখ টাকা। সবমিলিয়ে আর্থিক ক্ষতির পরিমান দাঁড়ায় প্রায় ৫০ লাখ টাকা।

দাউদকান্দি উপজেলায় ৫টি ইটভাটা বন্যার পানিতে কোন ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটেনি বলে নিশ্চিত করেছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আরাফাতুল আলম। 

তিতাস উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা ৭টি তবে ৩টি ইটভাটায় বন্যার পানি ঢুকেছে। এতে তেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কাজী এনামুল হক।  

মেঘনা উপজেলায় ইটভাটার সংখ্যা একটি। এবারের প্লাবনে কোনটির কোনরূপ ক্ষয় ক্ষতি হয়নি বলে জানিয়েছেন মেঘনা থানার ওসি (তদন্ত) আব্দুর রাজ্জাক। 

হোমনায় ১টি ইটভাটার কাচামালসহ মেশিনের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ক্ষেমালিকা চাকমা।

কুমিল্লা সদর, সদর দক্ষিণ, লালমাই, বরুড়া, মুরাদনগর সহ এ উপজেলায় সর্বমোট ৫০ টির উপর ইটভাটা রয়েছে, এসব এলাকার বন্যার পানি সেভাবে কোন ইটভাটার কাচামাল সহ মেশিনের খুব একটা ক্ষতি হয়নি বলে ইটভাটার মালিক পক্ষথেকে জানা গেছে।

জেলার ব্রাহ্মণপাড়ায় ৪টি, চান্দিনায় ১৭টি, দেবিদ্বারে ইটভাটা রয়েছে ১৭টি। এর মধ্যে কাচামাল মেশিনের কোন ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায় নি বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা।

লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ইটভাটাগুলোর বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হচ্ছে।

কুমিল্লা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মোসাব্বের হোসেন মুহাম্মদ রাজীব জানান, এ জেলায় ২৯১টি ইটভাটার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশংকা রয়েছে। ভাটার মেশিনপত্র ছাড়াও কিলনের দেয়াল ও পাইপলাইন নষ্ট হয়েছে। এসব ভাটার প্রতিটিরই আনুমানিক ২০ থেকে ৩০ লাখ টাকা মেরামত খরচ লাগবে। অন্যান্য ভাটাগুলোর বেশিরভাগই আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে ইটভাটাগুলো ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ দ্রুত কাটিয়ে উঠার প্রয়োজনীয় সহায়তা করা হবে। 

Top Post Ad

আলমাছ ষ্টীল এন্ড স্টান্ডার্ড ফার্ণিচার