Featured

Type Here to Get Search Results !

মুক্তিযোদ্ধা কানুর ফাঁসি চেয়েছিল আ'লীগ!

আবু বকর সুজন: কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে জুতার মালা পরানো বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হাই ভূঁইয়া কানুর ফাঁসি চেয়েছিল আওয়ামী লীগ। ২০১৬ সালে যুবলীগ নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ রানা হত্যার প্রতিবাদে অভিযুক্ত সেই কৃষকলীগ নেতা কানুকে গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে সমাবেশ করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ।

ওই সমাবেশে উপজেলা আ.লীগের প্রচার সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান মোশারফ হোসেন বলেন, আব্দুল হাই কানুর কারণে স্থানীয় আ.লীগ নেতাকর্মীরাও এলাকা ছাড়া। এখন থেকে আব্দুল হাই কানুকে এবং তার ছেলেকে যেখানে পাওয়া যাবে ধরে পুলিশের কাছে হস্তান্তর করবেন। তার অত্যাচার-নির্যাতনে আমাদের দলের কেউ ভয়ে এলাকা আসতে পারছে না। অবিলম্বে তাকে গ্রেপ্তার করে তার ফাঁসির দাবি জানাই।

লাঞ্ছিত আব্দুল হাই ভূঁইয়া কানু চৌদ্দগ্রামের লুদিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি কৃষকলীগের কেন্দ্রীয় সদস্য।

অভিযোগ রয়েছে, এই কানুর বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ কমপক্ষে ৮টি মামলা চলমান। তার ছেলে বিপ্লবও একাধিকবার জেল খেটেছেন। এর আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট ডাকাতি, সংঘর্ষসহ বহু অপরাধের ঘটনায় সরাসরি জড়িত কানু। এ ছাড়াও তার অত্যাচারে লুদিয়ারা-কুলিয়ারা গ্রামের অনেক যুবক গত ১৬-১৭ বছর এলাকায় থাকতে পারেনি।

স্থানীয়রা জানান, আওয়ামী সরকারের আমলে কেন্দ্রীয় কৃষকলীগ নেতা আব্দুল হাই কানু শুধু জামায়াত-বিএনপির লোকজনের ওপর আক্রমণ করেই ক্ষান্ত থাকেননি বরং নিজ দল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরও এলাকা ছাড়া করেন। ২০১৩ সালের জুন মাসে কানু ও তার ছেলে গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া বিপ্লবের সন্ত্রাসী বাহিনীর হাতে নির্যাতনের শিকার হন ব্যবসায়ী তৌহিদা আক্তার ও আলমগীর হোসেন। এসময় তাদের ব্যবহৃত প্রাইভেটকার ভাঙচুর করা হয়। ওই ঘটনা বিভিন্ন গণমাধ্যমে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশ করেছিল।

আব্দুল হাই কানুকে নিয়ে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনায় স্থানীয় যুবক আনোয়ার হোসেন বলেন, ভিডিও ভাইরালের এ ঘটনা পারিবারিক দ্বন্দ্বের জেরে। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনো সম্পৃক্ততা নাই। গত ২০১৬ সালের ৩ সেপ্টেম্বর যুবলীগ নেতা আবু বক্কর ছিদ্দিক প্রকাশ রানাকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করে কানু, তার ছেলে বিপ্লব ও তাদের সহযোগীরা। ওইদিন আমি নিজেও গুলির শব্দ শুনে ভয়ে ব্রিজ থেকে লাফ দিয়ে আহত হই।

তিনি আরও বলেন, কানু আমার চাচা লুদিয়ারা গ্রামের নুরুল ইসলাম মিনারকে রাতের আঁধারে মারধর করে। একই বছর তিনি লুদিয়ারা গ্রামের একটি অনুষ্ঠানে দুপুরে খাওয়ার টেবিল থেকে মহিউদ্দিন আহমেদ ভুঁইয়া নঈম নামে এক ব্যবসায়ীর খাবার প্লেট ছুড়ে ফেলে দেন। এসময় তাকে হেনস্তা করে একদিনের আলটিমেটাম দিয়ে এলাকাছাড়া করেন। তখন তার এই আচরণে অনেক দাওয়াতি মেহমান না খেয়ে গ্রাম থেকে ভয়ে চলে যান।

স্থানীয়রা জানান, কানু গত ১৬ বছরে অন্যের বাড়িতে ভাঙচুর চালানো, বিএনপি-জামায়াত তকমা দিয়ে অসংখ্য, অগণিত মানুষকে এলাকা ছাড়া করা, প্রবাসে পাড়ি জমাতে বাধ্য করা ও দলীয় কর্মীদের মারধর, হত্যার মতো গুরুতর বিষয়ে অভিযুক্ত। এসব কারণে নিজ দলীয় ক্যাডারদের হাতে মারধরের শিকারও হয়েছেন তিনি।

তারা আরও জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩-১৪ সাল পর্যন্ত জামায়াত-বিএনপির লোকজন এলাকায় ঢুকতেই পারেননি। বিএনপি-জামায়াতের লোকদের বাড়িতে হামলা, বাড়ি থেকেও বের করে দেওয়াসহ অনেকের বাড়িঘর ভাঙচুর, মারধর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে উঠিয়ে দেওয়াসহ নানা অত্যাচারের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অনেকে তার অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে বিদেশেও পাড়ি জমান।

নামা প্রকাশে অনিচ্ছুক লুদিয়ারা গ্রামের এক যুবক বলেন, ২০১৬ সালে স্থানীয় ইউপি নির্বাচনে কানুর ছেলে একপক্ষে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেন, অন্যদিকে ছিলেন সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের প্রার্থী জাহিদ হাসান টিপু। ভোট ডাকাতি নিয়ে তাদের মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষে সাতজন গুরুতর আহত হয়। এ ঘটনায় কানুর বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়ে চৌদ্দগ্রাম থানায় মামলা করেন।

তিনি আরও বলেন, ওই সময়ে তারা নিজেরাই (আওয়ামী লীগ) বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যান। বিভিন্ন সময় নিজেদের মধ্যেও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। তখন কানু ও তার ছেলে বিপ্লবের (তৎকালীন ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি) নেতৃত্বে যুবলীগ কর্মী রানা হত্যার ঘটনা ঘটায়।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা যুবলীগের যুগ্ম সম্পাদক শাহীন মারা যান কুমিল্লা কারাগারে। এই মৃত্যু স্বাভাবিক ছিল না। অভিযোগ রয়েছে, শাহীনকে হত্যা করা হয় এবং এতে সম্পৃক্ততা ছিল কানুর। শাহীনের জানাজায় এলে এলাকাবাসীর তোপের মুখে ওই সময় সবার কাছে হাতজোড় করে ক্ষমা চান কানু। এরপর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের হাতে কয়েক দফা মারধরের শিকার হন।

স্থানীয়রা বলছেন, কৃষকলীগ নেতা আব্দুল হাই কানুর সাম্প্রতিক ঘটনাটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক নয়। কুলিয়ারা উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী আবদুল হালিম মজুমদারকে লাথি মেরে পুকুরে ফেলে দেওয়ার ঘটনার জেরেই মূলত জুতার মালার ঘটনাটি ঘটেছে। একপর্যায়ে কানু জুতার মালা সরিয়ে এলাকায় থাকার আকুতি জানান। এ সময় তাকে এলাকা ছাড়ার হুমকি দিতে থাকেন ঘিরে থাকা লোকজন। তিনি হাতজোড় করে ক্ষমা প্রার্থনাও করেন।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুর রহমান (৮০) অভিযোগ করে বলেন, কানু আমার ভাইকে বিদ্যালয়ের নির্বাচনের সময় লাথি মেরে পুকুরে ফেলে দেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আমার ভাইয়ের থেকে ২৬ লাখ টাকা চাঁদাবাজি করেন। এমনকি আমার ঘর নির্মাণের সময় আমার থেকেও ৭ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। তার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। মানুষের অনেক ক্ষোভ আছে।

সাবেক ইউপি সদস্য আবদুল হক এ প্রতিনিধিকে বলেন, কানু গত ১৭ বছরে এলাকায় সন্ত্রাসের রাজনীতি কায়েম করেছেন। একাধিক হত্যা, বাড়িঘর ভাঙচুর এবং চাঁদাবাজির সঙ্গেও জড়িত। স্থানীয়রা পূর্বের ক্ষোভ থেকে এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এটা তাদের ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ।

এদিকে, বীর মুক্তিযোদ্ধা কানু লাঞ্ছিতের ঘটনায় দুই সমর্থককে বহিষ্কার করেছে জামায়াতে ইসলামী। একইসঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাকে লাঞ্ছিত করায় নিন্দা জানিয়ে জড়িতদের গ্রেপ্তার দাবি করেছে দলটি।

চৌদ্দগ্রাম উপজেলা জামায়াতের সেক্রেটারি বেলাল হোসাইন বলেন, কৃষকলীগ নেতা কানু নিজ দলের কর্মী রানা হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি। পূর্বের বিভিন্ন বিরোধ থেকে এলাকাবাসী এ ঘটনা ঘটিয়েছেন। এর সঙ্গে রাজনৈতিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি এটিএম আক্তারুজ্জামান বলেন, আব্দুল হাই ভূঁইয়া কানুর বিরুদ্ধে ৮টি মামলার বিষয়ে পুরোনো অপারেটরের মাধ্যমে জেনেছি। তবে আমি একটি হত্যা মামলা এবং একটি ভাঙচুরের মামলার তথ্য পেয়েছি।


Top Post Ad

আলমাছ ষ্টীল এন্ড স্টান্ডার্ড ফার্ণিচার