অবস্থান কর্মসূচী চলাকালে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরে শিক্ষকদের মাঝে বক্তব্য রাখেন, লাকসাম উপজেলা সরকারি প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির সেক্রেটারী মোঃ বিল্লাল হোসেন, আন্দোলনরত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারি শিক্ষক মাসুম বিল্লাহ, জসিম উদ্দিন, একরামুল হক মুন্না, ফারুক আহমেদ, খলিলুর রহমান, কবির আহমদ, আবদুল লতিফ, সালমা জাহান, রনক জাহান, ফারজানা মনির, মনির হোসেন প্রমুখ। এ সময় উপজেলার প্রায় ৫শ’ সহকারি শিক্ষক একাত্মতা পোষণ করে আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন।
শিক্ষকরা জানান, অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তির প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নে ২৩ দিন অতিবাহিত হলেও অদ্যাবধি দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় "প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদ" এর ভার্চুয়াল মিটিংয়ের যৌথ সিদ্ধান্ত মোতাবেক, বুধবার হতে সারাদেশের সকল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে "কমপ্লিট শাটডাউন" বা তালাবদ্ধ কর্মসূচী চলছে।
অর্থমন্ত্রণালয়ের কমিটমেন্ট অনুযায়ী আপাতত ১১তম গ্রেডসহ ৩ দফা বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত লাগাতার পরীক্ষা বর্জনসহ বিদ্যালয়ে "কমপ্লিট শাটডাউন" বা তালাবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়। প্রজ্ঞাপন জারি না হওয়া পর্যন্ত এই কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি চলবে।
প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ ও বাংলাদেশ প্রাথমিক সহকারী শিক্ষক সংগঠন ঐক্য পরিষদের ৩ দফা দাবির মধ্যে রয়েছে- ১. সহকারী শিক্ষকদের বেতন স্কেল ১০ম গ্রেড দাবির প্রেক্ষিতে অর্থ অর্থমন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি (১০.১১.২০২৫) অনুযায়ি আপাতত ১১তম গ্রেডের প্রজ্ঞাপন জারি। ২. ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতার অবসান। ৩. সহকারী শিক্ষক থেকে প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতি।
এদিকে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের মাধ্যমে জেলা প্রশাসককে স্মারকলিপি দেন শিক্ষকরা।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুত প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি (১০.১১.২০২৫) দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আপাতত ১১তম গ্রেড প্রদান, উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা চেয়ে স্মারকলিপিতে বলা হয়-
ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলন, তাজা রক্তের বিনিময়ে নতুন সূর্যোদয়ের মাধ্যমে আমরা পেয়েছি বৈষম্যবিরোধী অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। আমরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পক্ষ থেকে সেসব বুক চেতিয়ে দেওয়া আত্মদানকারী বীরশহিদ ছাত্রদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে, বিনম্র শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছি।
আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, ঢাকার শাহবাগে শান্তিপূর্ণ কলম সমর্পণ কর্মসূচিতে পুলিশের অতর্কিত লাঠিচার্জ, সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল নিক্ষেপ, জলকামান ব্যবহার, রাবার বুলেটের আঘাতে শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষিকা মারাত্মকভাবে আহত হয়। কারো দু'পা ভেঙে যায়, কারো হাত ভেঙে যায়, কারো চোখ নষ্ট হয়ে যায়, কারো হাতে, পায়ে, পেটে, মাথায় রাবার বুলেট ও স্প্রিন্টার বিদ্ধ হয়, অনেকের হাত-পা পুড়ে যায়। চাঁদপুর জেলার মতলব উত্তর উপজেলার ঝিনাইয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের, সহকারী শিক্ষক জনাব ফাতেমা আক্তার ৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডসহ তিন দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ঢাকার শাহবাগে কলম সর্মপণ কর্মসূচিতে পুলিশের অতর্কিত সাউন্ড গ্রেনেড হামলার তীব্র শব্দে গুরুতর অসুস্থ হয়ে রাজধানীর মিরপুরস্থ অলক হাসপাতালের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৬ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে সকাল ১০ ঘটিকায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন)। মরহমার মৃত্যুতে আমরা গভীর শোক প্রকাশ ও পরিবারের প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করছি এবং মহান আল্লাহর নিকট তাঁর আত্বার মাগফেরাত কামনা করছি আমিন। এরই সাথে সাথে আমরা পুলিশের এই নারকীয় ও অমানবিক হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি এবং আহত শিক্ষকদের রাষ্ট্রীয়ভাবে সুচিকিৎসার ব্যবস্থা ও নিহত শিক্ষিকা ফাতেমা আক্তারের পরিবারকে রাষ্ট্রীয়ভাবে ক্ষতিপূরণসহ তাঁকে পূর্ণ পেনশন প্রদানের দাবি করছি।
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ যোগ্যতা: স্নাতক সমমান (২য় বিভাগ) বেতন গ্রেড: ১৩তম, যেখানে অষ্টম শ্রেণি পাস ড্রাইভার ভাইদের বেতন গ্রেড: ১১তম/১২তম।
প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের ১০ম গ্রেডের যৌক্তিকতা তুলে ধরে আরো উল্লেখ করা হয়- বিভিন্ন মন্ত্রণালেয়ের অধীনে কম শিক্ষাগত যোগ্যতার লোকদের ১০ম গ্রেড। এদের মধ্যে রয়েছে- সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, সাব-ইন্সপেক্টর, নার্স/সিনিয়র নার্স, উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা, ইউনিয়ন পরিষদের সচিব, প্রশাসনিক/ ব্যক্তিগত কর্মকর্তা, পিটিআই সংলগ্ন পরীক্ষণ বিদ্যালয়ের শিক্ষক। এইচএসসি থেকে স্নাতক ডিগ্রিধারী এসব পদ ১০ম গ্রেডের হলেও স্নাতক ডিগ্রিধারী প্রাথমিকের সহকারী শিক্ষকদের গ্রেড ১৩তম!
শিক্ষকদের প্রাণের দাবি ১০ম গ্রেড হলেও গত ১০.১১.২০২৫ খ্রিষ্টাব্দে অর্থ মন্ত্রণালয় আপাতত ১১তম গ্রেড, সহকারী শিক্ষকদের ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদানের জটিলতা নিরসন ও প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি প্রদানের প্রতিশ্রুতি প্রদান করেন (সংযুক্তি প্রেস বিজ্ঞপ্তি)। ২০দিন পেরিয়ে গেলেও প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না হওয়ায় আমরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতিসহ পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি দিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের জিম্মি করতে চাইনা।
প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকরা কোমলমতি শিক্ষার্থীদের উন্নত জীবনের স্বপ্নদর্শনে উদ্বুদ্ধ করেন। পড়াশোনা শেষ করে মহৎ পেশায় নতুন নিয়োগ পাওয়া একজন সহকারী শিক্ষক ১৩তম গ্রেডে মাত্র ১১,০০০/- টাকা বেতন গ্রেডে (১১,০০০+৪৯৫০+১৫০০+২০০) মোট: ১৭,৬৫০/- টাকা পায়। মাসিক এ বেতনে সংকুলান না হয়ে অনেক ক্ষেত্রে ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে হতাশা ও মনঃকষ্ট নিয়ে যাপিত জীবন অতিবাহিত করেন। মাসিক এ বেতনভাতা দিয়ে কখনো উন্নত জীবন মান সম্ভব নয়। আর এই কারণেই মেধাবীরা প্রাথমিকে শিক্ষকতা পেশায় না এসে অন্য পেশায় ছুটছেন। নোবেল বিজয়ী বীরের জাতি, আমাদের আশা আকাঙ্ক্ষার মূর্ত প্রতীক, নোবেল বিজয়ী মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা বৈষম্যবিহীন রাষ্ট্র বিনির্মানে দৃঢ় প্রত্যয়ী। উন্নত, সুখী, সমতার বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। প্রাথমিকের কোমলমতি শিক্ষার্থীদের যোগ্য ও স্মার্ট নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে প্রাথমিকের শিক্ষকতা পেশায় মেধাবীদের আকৃষ্ট করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা আশু প্রয়োজন।
জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ৭ (১) ও (২) অনুযায়ী কোন স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ব্যতিরেকে একই পদে ১০ (দশ) বছর পূর্তিতে চাকুরি সন্তোষজনক হওয়া সাপেক্ষে সয়ংক্রিয়ভাবে ১১তম বছরে পরবর্তীতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন প্রাপ্য হবেন। কিন্তু প্রাথমিক সহকারী শিক্ষকগণ তা পাচ্ছেন না। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সহকারী শিক্ষকদের ০৯/০২/২০২০ তারিখে ১৩তম গ্রেডে উন্নীত করেন। ০৯/০২/২০২০ সালে প্রদানকৃত উন্নীত স্কেল যা সহকারী শিক্ষকদের মূল গ্রেড (Substantive Gread) কিন্তু মূল গ্রেড (Substantive Gread) কে উচ্চতর গ্রেড বিবেচনা করে জাতীয় বেতন স্কেল, ২০১৫ এর ৭ (১) ও (২) ধারার বিপক্ষে অর্থবিভাগ মতামত দিয়ে লক্ষ লক্ষ সহকারী শিক্ষকদের ১০ বছর ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রদানে বঞ্চিত করা হচ্ছে যার জটিলতা নিরসনের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সদয় দৃষ্টি আকর্ষণ করেছি।
সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদ ৬৫,৫৬৮ টি এবং সহকারী শিক্ষক পদ ৩,৫০,০০০ টির অধিক। প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা- ২০২৫ অনুযায়ী প্রধান শিক্ষক পদে ৮০% পদোন্নতির মাধ্যমে এবং ২০% সরাসরি নিয়োগের মাধ্যমে পূরণ করা হবে। যেখানে আমরা সহকারী শিক্ষকরা শতভাগ পদোন্নতির দাবি দীর্ঘদিন থেকে করে আসছি, আমাদের দাবি উপেক্ষা করে মন্ত্রণালয় নিয়োগ বিধিতে ৮০% পদোন্নতি রাখার ফলে লক্ষ লক্ষ সহকারী শিক্ষক পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত হবে এমতাবস্থায় প্রধান শিক্ষক পদে শতভাগ পদোন্নতি প্রদানের জন্য মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা মহোদয়ের সদয় অনুগ্রহ কামনা করেছি।
মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা নিশ্চিতকরণে এবং মেধাবীদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা পেশায় আকৃষ্ট করতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের প্রতিশ্রুতি মোতাবেক প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রেস বিজ্ঞপ্তি (১০.১১.২০২৫) দ্রুত বাস্তবায়নের দাবিতে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের আপাতত ১১তম গ্রেড প্রদান, উচ্চতর গ্রেড সংক্রান্ত সমস্যার সমাধান ও শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা প্রদানের ৩ দফা দাবি "প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদ” এর।







.jpg)


