
জানা গেছে, চৌদ্দগ্রামে এসএসসির গণিত পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে শিক্ষকসহ দুজনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। সোমবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আটককৃতরা হলো ফেলনা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক শাহাদাত হোসেন ও উনকোট উচ্চ বিদ্যালয়ের অফিস সহকারী শুখরঞ্জন দাস। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জেপি দেওয়ান তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে উপজেলার মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সে রাতেই কেন্দ্র সচিব কমলেশ মণ্ডল বাদী হয়ে থানায় একটি মামলা দায়ের করেন।
জেপি দেওয়ান বলেন, ‘রোববার এসএসসি গণিত পরীক্ষা চলাকালীন গোপন সংবাদের মাধ্যমে জানতে পারি মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রের পাশের মার্কেটে একটি চক্র গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে। এমন খবরের ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক ওই মার্কেটে অভিযান চালিয়ে শাহাদাত হোসেন ও সুখরঞ্জন দাস নামে দুজনকে আটক করি। ওই সময় তাদের কাছ থেকে গণিত প্রশ্ন পাওয়া যায়। স্মার্টফোনের মাধ্যমে গণিতের উত্তরপত্রের সমাধানগুলো শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করছিলেন তারা। এ সময় আমরা তাদের হেফাজত থেকে দুটি স্মার্টফোন ও একটি গণিত গাইড বই জব্দ করি। আটককৃতরা প্রশ্নপত্র ফাঁসের কথা স্বীকার করেছে।’
মামলার বাদী মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও কেন্দ্র সচিব কমলেশ মণ্ডল বলেন, ‘রোববার আটককৃতরা বিদ্যালয়ের পাশে মার্কেটে সোনালি জুয়েলার্সের তৃতীয় তলায় বসে নিউটন গাইড থেকে মোবাইলের বিভিন্ন অ্যাপসের মাধ্যমে উত্তরপত্র লিখে শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করছিল। পরে তাদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় বাদী হয়ে আটককৃতদের বিরুদ্ধে প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে নিয়মিত মামলা (নং-৩৭) দায়ের করি।’
চৌদ্দগ্রাম থানার ওসি ত্রিনাথ সাহা বলেন, ‘মুন্সিরহাট উচ্চ বিদ্যালয় পরীক্ষা কেন্দ্রের পাশের একটি ভবন থেকে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করে আমাদের হাতে সোপর্দ করেছে। এ ঘটনায় কেন্দ্র সচিব বাদী হয়ে দুজনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন। সোমবার সকালে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়েছে।
অপরদিকে, মনোহরগঞ্জে প্রধান শিক্ষকসহ ৩ শিক্ষকের বিরুদ্ধে এসএসসি'র প্রশ্নপত্র ফাঁসের অভিযোগে ২ জনকে আটক করে ভ্রাম্যমাণ আদালত। অপর অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক পলাতক রয়েছেন।
রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) গণিত পরীক্ষা চলাকালীন উপজেলার পোমগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এ ঘটনা ঘটে।
আটককৃতরা হলেন, শাহরাস্তী উপজেলার নাতারা গ্রামের তালুকদার বাড়ীর আবু ইউছুফের ছেলে আল আমিন (৩৩), একই উপজেলার বেরনাইয়া গ্রামের আদিপুর বাড়ীর সাহেব উদ্দিনের ছেলে মফিজ উদ্দিন (২৬)।
মামলা সূত্রে জানা যায়, পোমগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি'র গণিত বিষয়ের প্রশ্নপত্র মোবাইল হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে হল সুপার লালচাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক শামছুল আলম পাটোয়ারী প্রশ্নপত্র সমাধান করে উত্তরপত্র পাঠানোর জন্য বাইরে থাকা অপর দুই শিক্ষকের কাছে পরীক্ষার হল থেকে প্রশ্নপত্র পাঠায়।
এ ঘটনায় পোমগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আলমগীর হোসেন বাদী হয়ে অভিযুক্ত তিন শিক্ষকের বিরুদ্ধে মনোহরগঞ্জ থানায় মামলা করেন।
মনোহরগঞ্জ উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এনামুল হাসান এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে মনোহরগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা উজালা রানী চাকমা জানান, মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের আওতায় এসএসসি'র গণিত বিষয়ে পরীক্ষা চলছিলো পোমগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে, পাশের মার্কেটে একটি চক্র গণিত পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করেছে এমন খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ওই মার্কেটে অভিযান চালিয়ে আল আমিন ও মফিজ উদ্দিন নামে দুই শিক্ষককে আটক করা হয়। পরে তাদেরকে থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করা হয়েছে। প্রশ্ন ফাঁস চক্রের সদস্যদের সঙ্গে গণিতের প্রশ্নপত্র মোবাইল ফোন ও ডিভাইস পাওয়া যায়। স্মার্টফোনের মাধ্যমে গণিতের উত্তরপত্রের সমাধানগুলো শিক্ষার্থীদের সরবরাহ করছিলেন তারা।
মনোহরগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ হানিফ সরকার জানান, প্রশ্ন ফাঁস চক্রের তিন সদস্যের মধ্যে দুইজনকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে, অপর আসামি মনোহরগঞ্জ উপজেলার লালচাঁদপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও গণিত পরীক্ষার হল সুপার সামছুল আলম পাটোয়ারীকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে।