নিজস্ব সংবাদদাতা: চুরির অপবাদে এক অটোচালকসহ দুজনকে নির্যাতন, আটক ও ভয় ভীতি দেখিয়ে ৫৫ হাজার টাকা আদায়ের অভিযোগে লালমাই উপজেলার বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ আলম ও মেম্বার ফারুকের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে। ১২ মার্চ বিকেলে উপজেলার বাগমারা দক্ষিণ ইউনিয়নের মহেষপুর গ্রামের নির্যাতিত অটো চালক বিজয়ের পিতা কাজল বাদি হয়ে লালমাই থানায় এই অভিযোগ করেন।
অভিযোগের বিবরণ ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, গত ৯ মার্চ ভোরে বাদির ছেলে বিজয় (১৮) নিজের মালিকানাধীন অটো রিকশাযোগে একই বাড়ির মন্তাজের অটোর ৪টি ব্যাটারি মেরামতের জন্য লাকসাম রওনা করে। বিজয়ের সাথে অটোতে ছিল তার ভাগিনা ইসমাইল (১৬)। তারা অটো চালিয়ে বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়নের চাউলভান্ডার গ্রামস্থ বটতলা পৌছলে স্থানীয়রা চোর চোর বলে চিৎকার করে এবং তাদের আটক করে মারধর করে। খবর পেয়ে স্থানীয় ইউপি মেম্বার ফারুক ঘটনাস্থলে পৌঁছে জিজ্ঞাসাবাদের নামে আটককৃতদের পুনরায় মারধর করে। এরপর গ্রাম পুলিশ মোবারক অন্যদের সহায়তায় আটককৃতদের উদ্ধার করে ইউনিয়ন পরিষদের ২য় তলার একটি কক্ষে তাদের রশি দিয়ে বেঁধে রাখে। পরবর্তীতে শনিবার বেলা ১১টায় বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লেয়াকত হোসেন ভুঁইয়ার নেতৃত্বে তার কার্যালয়ে শালিস বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ আলম, আটককৃতদের অভিভাবক, অটোতে থাকা ৪টি বেটারির মালিক মন্তাজ ও মহেষপুর গ্রামের সর্দারসহ গণ্যমান্যরা উপস্থিত ছিলেন। তবে প্রথম পর্যায়ে শালিস বৈঠকে আটককৃতদের আনা হয়নি। শালিসে ইউপি চেয়ারম্যান তাদের এলাকার বিভিন্ন চুরির তথ্য উপস্থাপন করে আটককৃতদের অভিভাবকদের কাছে ২০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপুরন দাবি করেন। তখন ফারুক মেম্বার বলেন-২০ লক্ষ নয়, ৫লক্ষ টাকা দিলে চলবে। কিন্তু বিজয়ের ফেরিওয়ালা পিতার পক্ষে এতো টাকা ক্ষতিপূরন দেওয়া সম্ভব না। তাই তিনি পকেটে থাকা ১৫ হাজার টাকা ফারুক মেম্বারের হাতে দিলে মেম্বার সেই টাকা নিতে রাজি হননি। ওইসময় প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ আলম ও ফারুক মেম্বার বলেন ১৫ হাজার টাকায় হবে না, আপনারা ৬০ হাজার টাকা ব্যবস্থা করে দেন। এরপর ফেরিওয়ালা কাজলের অনুরোধে তার স্ত্রী বাগমারা বাজারে স্বর্ণ বন্ধক রেখে ৩০ হাজার টাকা পাঠালে ইউনিয়ন পরিষদের পাশের একটি বিকাশ দোকানের মাধ্যমে সংগ্রহ করেন। আটক বিজয়ের শ্বশুড় দেন ১০ হাজার টাকা। বিজয়ের পিতা সবমিলিয়ে ৫৫ হাজার টাকা ফারুক মেম্বারের হাতে দিলে পরিস্থিতি কিছুটা শিথিল হয়। পরিষদের পক্ষে আটককৃত ও তাদের অভিভাবকদের কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেওয়া হয়। শনিবার দুপুর অনুমান ১২টায় বেটারির মালিকের কোন অভিযোগ না থাকায় এবং বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন এলাকার কোন ব্যক্তির চুরির অভিযোগ না থাকায় আটককৃতদের গ্রাম পুলিশের মাধ্যমে ঘটনাস্থল থেকে পাকা সড়কে পৌঁছে ছেড়ে দেওয়া হয়।
গ্রাম পুলিশ মোবারক হোসেন বলেন, খবর পেয়ে আমি বটতলা থেকে দুজনকে উদ্ধার করে পরিষদের ২য় তলায় রাখি। এরপর শালিস শেষে কোন অভিযোগ প্রমান না হওয়ায় দুপুরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। আটককৃতদের পরিবারের কাছ থেকে আমরা সরাসরি কোন টাকা নিইনি। তবে আটককৃতদের ছেড়ে দেওয়ার পরপর ফারুক মেম্বার আমাকে এক হাজার টাকা, অন্য একজন গ্রাম পুলিশকে এক হাজার টাকা দিয়েছেন।
অভিযুক্ত ফারুক মেম্বার বলেন, আমি তাদেরকে নির্যাতনও করিনি, কোন টাকাও নিইনি। শুধু গ্রাম পুলিশ ও কয়েকজন ছেলেকে কিছু হাত খরচ তারা দিয়েছে।
প্যানেল চেয়ারম্যান শাহ আলম বলেন, শালিস বৈঠকে আমি ছিলাম। তবে আটককৃতদের নির্যাতন ও টাকা আদায়ের বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। কেউ টাকা নিয়ে থাকলে এটা তার বিষয়।
নির্যাতিত বিজয়ের পিতা কাজল বলেন, এভাবে যে কাউকে সড়কে ধাওয়া করে চুরির অপবাদে নির্যাতন অব্যাহত থাকলে সড়কে চলাচল অনিরাপদ হয়ে যাবে। তাছাড়া আমার ছেলের অপরাধ থাকলে থানা পুলিশ আছে। কিন্তু তাদের নির্যাতন ও আটক করে জোর খাটিয়ে আমাদের থেকে ৫৫ হাজার টাকা কার জন্য নেওয়া হয়েছে? আমার ছেলের চিকিৎসার খরচ চালাতে পারছি না আমি। আমার টাকা আমাকে ফেরত দেওয়া হোক।
বেলঘর দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান লেয়াকত হোসেন ভুঁইয়া বলেন, চোর সন্দেহে এলাকাবাসি তাদের আটক করে মারধর করেছে। পরবর্তীতে তাদের বিরুদ্ধে আমার এলাকার কোন চুরির ঘটনা প্রমাণ হয়নি। বেটারির মালিকও তাদের পক্ষে কথা বলেছে। তাই স্ট্যাম্পে লেখালেখির পর আমার অফিসে শালিস বৈঠক শেষে আমরা তাদের ছেড়ে দিয়েছি। আমার জানামতে তাদের থেকে কোন টাকা নেওয়া হয়নি। এরপরও কেউ ব্যক্তিগত ভাবে টাকা নিয়ে থাকলে পুলিশ তদন্ত করে বের করুক।
এ বিষয়ে লালমাই থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুল্লাহ আল মাহফুজ বলেন, কাজল নামের একজন একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। তদন্ত করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।