মো. আবুল কালাম: স্বজনদের সাথে ঈদ কাটিয়ে কর্মস্থলে ফিরছে মানুষ। আর তাই যানবাহনে অপেক্ষায় যাত্রীদের ভিড়। আর এ অবস্থাকে পুঁজি করে কুমিল্লার লাকসামে ঢাকাগামী দূরপাল্লার তিশা বাস, স্থানীয় বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশা ও মিনিবাসে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এতে ঈদ পরবর্তী কর্মস্থলে ফেরা যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।
ভুক্তভোগী যাত্রীরা জানান, লাকসাম থেকে ঢাকা রুটে চলাচলকারী তিশা বাসে ভাড়া ছিল ২৫০ টাকা। ফিরতি পথে ছিল ২৩০ টাকা। কিন্তু ঈদকে পুঁজি করে ১০০ টাকা ভাড়া বাড়িয়ে ৩৫০টাকা নিচ্ছে তিশা বাস। ঈদের দিন থেকে বাড়তি এ ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। এছাড়া, লাকসাম থেকে কুমিল্লা যাতায়াতকারী মিনিবাসগুলো অতিরিক্ত ভাড়া কাটছে।
অন্যদিকে, লাকসাম সদর থেকে মনোহরগঞ্জ, নাঙ্গলকোট, বাঙ্গড্ডা, খিলা, নাথেরপেটুয়া, বিপুলাসার, শাকরা, আটিটি, মুদাফরগঞ্জ, আউশপাড়া, কামড্ডা, চিতোষী, শ্রীয়াং, কালিয়াপুরসহ বিভিন্ন রুটে চলাচলকারী সিএনজি চালিত অটোরিকশাগুলো যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করছে। দৃশ্যতঃ এসব দেখার যেন কেউ নেই। যে যার মতো ভাড়া নিচ্ছে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করলেই চালক, হেলপার ও স্ট্যান্ডের কর্মী ও দালালদের হাতে নাজেহাল হতে হয়।
সোমবার সন্ধ্যায় লাকসাম থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য লাকসাম পূর্ব ইউনিয়নের মোজাম্মেল হক ও ফয়েজ আহমেদ বাইপাস তিশা বাসের কাউন্টারে আসেন। টিকেট কাউন্টারে ঢাকা যাওয়ার জন্য ২৫০ টাকার স্থলে ৩৫০ টাকা ভাড়া চাইলে তারা প্রতিবাদ করেন। অন্য যাত্রীরাও প্রতিবাদ করেন। এ সময় বাসের হেলপার, চালক, বাস স্টান্ডের কর্মী ও কতেক দালাল প্রতিবাদকারী যাত্রীদের গালাগালসহ শারীরিকভাবে নাজেহাল করে।
এ বিষয়ে লাকসাম-ঢাকা তিশা বাস সার্ভিসের জিএম জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ঈদের সময় ঢাকা থেকে লাকসাম আসার সময় কোন যাত্রী পাইনা। তাই ঢাকা যেতে ১০০ টাকা বেশী ভাড়া নিচ্ছি। হিসেব করলে ডাবল ভাড়া নিতে হয়। অন্যান্য বাসগুলোও বেশি ভাড়া নিচ্ছে। এতে দোষের কিছু দেখছি না।
যাত্রীদের নাজেহাল করার বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের কোন লোক যাত্রীদের সাথে খারাপ আচরণ করেনি। অন্য কেউ করতে পারে।
এ ঘটনায় তিশা বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব হোসেন বলেন, কোন যাত্রীকে নাজেহাল করা হয়নি। এ সময় ভুক্তভোগী যাত্রীদের মুখোমুখি করলে তিনি তাদের কাছে ক্ষমা চেয়ে এমন ঘটনা আর না হওয়ার অঙ্গীকার করে পার পান।
অন্যদিকে, চাঁদপুর রেল গেইট থেকে মুদাফরগঞ্জ বাজারে যেতে মাত্র ১০/১২ মিনিটের রাস্তায় সিএনজি অটোরিকশার ভাড়া কয়েক মাস আগেও ছিল ২০ টাকা। কয়েক মাসের ব্যবধানে এ রুটের যাত্রীদের ভাড়া গুনতে হয় ৪০ টাকা। আর ঈদের দোহাই দিয়ে ৫০ টাকা ভাড়া আদায় করা হচ্ছে। আর প্রতিবাদ করলেই যাত্রীদের নাজেহাল হতে হয়। এ অরাজকতা দূর করতে প্রশাসনের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন ভুক্তভোগী যাত্রীরা।
অপরদিকে, লাকসাম থেকে মনোহরগঞ্জের ১২ কিলোমিটারে যাত্রীদের কাছ থেকে নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা ভাড়া। যা কিছুদিন আগেও ছিল ৩০ টাকা। কোন কারণ ছাড়াই ভাড়া বাড়ানো হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন যাত্রীরা। আর ঈদ এলেই ১০/২০ টাকা থেকে শুরু করে দ্বিগুণ ভাড়াও গুণছেন যাত্রীসাধারণ।
এ রুটের একাধিক যাত্রী আরও বলেন, লাকসাম থেকে সিএনজিতে উঠলেই ৪০ টাকা দিতে। ২/৪ মাইল গিয়ে নেমে গেলেও এ ভাড়া দিতে হয়।
মৃদুল নামে এক যাত্রী বলেন, লাকসাম থেকে আশিরপাড় গেলেও সিএনজি ভাড়া দিতে হয় ৪০ টাকা। অথচ আশিরপাড় থেকে মনোহরগঞ্জের ভাড়া ৩০ টাকা। লাকসাম থেকে মনোহরগঞ্জের কোন বাস না থাকায় সিএনজিগুলো যাত্রীদের পকেট কাটছে।
লাকসাম থেকে মনোহরগঞ্জের সিএনজি স্ট্যান্ডের পরিচালক জাহাঙ্গীর আলম জানান, এখান থেকে সিএনজিতে উঠলেই ৪০ টাকা দিতে হবে। যাত্রী যেখানেই নামুক সেটা দেখার বিষয় না।
যাত্রীরা আরও জানান, সন্ধ্যার পর থেকে প্রায় সকল রুটেই সিএনজি চালকরা আরও বেপরোয়া হয়ে পড়েন। যাত্রীদের কাছ থেকে তারা দ্বিগুণ-তিনগুণ এমনকি চারগুণ ভাড়াও বেশি নিয়ে থাকে। এর কোন প্রতিকার নেই।
এ বিষয়ে লাকসাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আব্দুল হাই সিদ্দিকী বলেন, যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়কারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আর কোনো যাত্রীকে নাজেহাল করা হলে দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।