নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গ্রামবাসীর মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন উভয়পক্ষের অর্ধশতাধিক লোক। দুই পক্ষের সংঘর্ষে স্থানীয় বাজারের অন্ততঃ ১২টি দোকানে ভাংচুরের শিকার হয়।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) রাতে মৈশাতুয়া ইউনিয়নের আশিরপাড় বাজারে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
খবর পেয়ে মনোহরগঞ্জ থানা পুলিশ, সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
আহতদের উদ্ধার করে মনোহরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, পার্শ্ববর্তী লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ বিভিন্ন হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এদের মধ্যে গুরুতর আহত অবস্থায় দুইজনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ও ২ জনকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আধিপত্য বিস্তার ও আশিরপাড় বাজার পরিচালনা নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে মৈশাতুয়া ইউনিয়নের আশিরপাড় গ্রাম ও খানাতুয়া গ্রামের লোকজনের মধ্যে বিরোধ চলছিল। ৫ আগষ্ট আওয়ামী সরকার পতনের পর বাজার পরিচালনা, খাস জমি দখল ও স্কুল মাঠের খেলাধুলা নিয়ে গ্রামবাসীর দু'পক্ষের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয় কয়েকজন। এ নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিলো। এরই জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় হঠাৎ খানাতুয়ার গ্রামের কয়েকজন যুবক একত্রিত হয়ে আশিরপাড় বাজারের ফল ব্যবসায়ী আরাফাতের (২২) উপর হামলা করে। এতে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সংঘর্ষে উভয় পক্ষের অন্তত অর্ধশতাধিক লোক আহত হন। গুরুতর আহত অবস্থায় আশিরপাড় গ্রামের শাহ আলমের ছেলে আরাফাত (২৫), আবুল কাশেমের ছেলে ফল ব্যবসায়ী আরাফাত হোসেন (২২), মাষ্টার আবুল কালাম আজাদের ছেলে মোরশেদ আলম মানিক (৩৮), আবদুল মুনাফের ছেলে সায়েদ (৪৫), আজিমের ছেলে আনোয়ার (৩৩), মৃত নুরুল হুদার ছেলে রাকিব (২৮), আবদুল সোবহানের ছেলে পারভেজ (৩২), মোরশেদ আলম মানিকের ছেলে সিয়াম (১২) ও খানাতুয়া গ্রামের জাকির হোসেন ছেলে সামছুল হক (৫০), আবুল কালাম (৪৫), শাফু মিয়ার ছেলে ফয়সাল (২১), নজির (৩০), সাত্তার, সিদ্দিকসহ অন্তত আরও ৬ জন আহত হয়।
বাজারের ঔষধ দোকানদার হুমায়ুন বলেন, সন্ধ্যা ৭টার দিকে আমার পাশে ফল ব্যবসায়ী আরাফাতের উপর হামলা করে কয়েকজন যুবক। তাদের হাতে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র দেখে ভয়ে বাজারে সকল ব্যবসায়ীরা দোকান বন্ধ করতে শুরু করলে এসময় উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তুমুল সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে।
আশিরপাড় গ্রামের বাসিন্দা মোরশেদ আলম মানিক বলেন, সন্ধ্যায় বাজারে এসে দেখি আরাফাত নামে এক ফল ব্যবসায়ীকে মারধর করছে খানাতুয়া গ্রামের শামিম, ফয়সাল, হৃদয়, শাহাবুদ্দিন, মহিনসহ কয়েকজন। আমি বাঁধা দিলে তারা আমাকে ও আমার ভাতিজা আরাফাত এবং আমার সন্তানকে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করে। তাতে আমাদের ১৫-২০ জন লোক আহত হন। এ সময় ১০/১৫টি দোকান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
খানাতুয়া গ্রামের বাসিন্দা নুর মোহাম্মদ যুগান্তরকে বলেন, আশিরপাড় গ্রামের লোকজন বেশ কিছু দিন ধরে আশিরপাড় বাজারটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য পায়তারা করে আসছে। বাজারের আশপাশের খাস জমি ও জায়গা দখল নিয়ে তারা ব্যবস্ত হয়ে পড়ে। করণে অকারণে বাজারের ব্যবসায়ীদের বিভিন্ন বিষয়ে জিম্মি করে টাকা আদায় করে। এসব বিষয়ে নিয়ে আমরা প্রতিবাদ করলে আশিরপাড় গ্রামের লোকজন একত্রিত হয়ে আমাদের উপর হামলা ও প্রাণনাশের হুমকি প্রদান করে। এছাড়াও এ বাজারে বেশিরভাগ ব্যবসায়ী খানাতুয়া গ্রামের। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বাজারের খানাতুয়া গ্রামের লোকজনকে হঠাৎ করে কুপিয়ে আহত করে আশিরপাড় গ্রামের লোকজন। এতে প্রায় ১০ জন আহত হয় এর মধ্যে গুরুতর ২ জনকে ঢাকা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রয়েছে। এছাড়াও আশিরপাড় গ্রামের লোকজন বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন নিয়ে এসে আমাদের গ্রামের প্রায় ১০ টি দোকান ভাংচুর চালিয়ে
নগদ টাকা ও দোকানের মালামাল লুটপাট করে নিয়ে যায় হামলাকারীরা। আমাদের কয়েকজনকে কুপিয়ে আহত করে।
মনোহরগঞ্জ থানার ওসি বিপুল চন্দ্র দে বুধবার সন্ধ্যায় জাগো লাকসামকে বলেন, আশিরপাড় বাজারে দু গ্রামের সংঘর্ষের সূত্রপাত ঘটে। সংবাদ পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়েছে। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।