নিজস্ব সংবাদদাতা: মহান বিজয় দিবসে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী মুদাফরগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন আউশপাড়ায় ৪নং ওয়ার্ডের সেটআপ, শীত বস্ত্র বিতরণ, বিজয় দিবস উপলক্ষে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা জেলা দক্ষিণ সহ-সেক্রেটারি বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আব্দুল মুবিন।
মুদাফরগঞ্জ উত্তর ইউনিয়ন জামায়াতের সভাপতি মাওলানা নুরে আলমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন, লাকসাম উপজেলা জামায়াতের আমীর হাফেজ জহিরুল ইসলাম, সেক্রেটারি জোবায়ের ফয়সাল।
ইউনিয়ন সেক্রেটারি মুহাম্মদ আমান উল্লাহর পরিচালনায় দুই পর্বের অনুষ্ঠানে শর্টপিছ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ এবং অসহায় শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন জামায়াতের নেতা-কর্মী এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বক্তারা উল্লেখ করেন, ইসলামী আন্দোলনের কুরআনিক পরিভাষা হচ্ছে ‘জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ’। এ কাজে অংশগ্রহন প্রত্যেক মুসলমানের ঈমানের অপরিহার্য দাবী। বর্তমান বিশ্ব প্রেক্ষাপটে এ মহান কাজ শুধুমাত্র আমাদের উপর ফরজই নয়; বরং ফরজে আইন তথা অবশ্যই পালনীয় (ফরজ)।
রাসূল (স.) এর ইকামাতে দ্বীনের পুরো আন্দোলনটি ছিল পাঁচটি পর্যায়ে- দাওয়াত ইলাল্লাহ, শাহাদাত আলান্নাস, কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ, ইকামতে দ্বীন এবং আমর বিল মারুফ-নেহি আনিল মুনকার।
মক্কার ১৩ বছরে তিনি প্রথম দুটি কাজ- দাওয়াত ও লোক তৈরি এবং বাকী তিনটি কাজ মদীনায় সম্পন্ন করেছেন।
হযরত আদম (আ) হতে রাসূল (সা) পর্যন্ত সকল নবী-রাসূলগণই দ্বীন কায়েমের এ মহান কাজে নিয়োজিত ছিলেন। কেউ দ্বীনকে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কায়েম করতে সক্ষম হয়েছেন, কেউ হননি। কিন্তু সকলেই দ্বীন কায়েমের প্রচেষ্টায় আপোসহীন ছিলেন।
সূরা শূরার ১৩ নং আয়াতে আল্লাহ তা স্পষ্ট করে বলেছেন- “তিনি তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন দ্বীন যার নির্দেশ দিয়েছিলেন তিনি নূহকে, আর যা আমি ওহী করেছি তোমাকে এবং যার নির্দেশ দিয়েছি ইব্রাহীম, মূসা ও ঈসাকে, এ বলে যে, তোমরা দ্বীনকে প্রতিষ্ঠিত কর এবং এতে মতভেদ করবে না।”
এমন কি সাহাবীগণের মাঝেও এমন কোন সাহাবী খুঁজে পাওয়া যায় না যিনি ইকামাতে দ্বীনের কাজ হতে বিরত ছিলেন। সাহাবী হযরত উম্মে মাখতুম (রা) অন্ধ এবং আমর ইবনে জুমহ (রা) খোঁড়া ছিলেন, তদোপুরি জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহর কাজে তাঁরা ছিলেন নিবেদিত প্রাণ।
জীবনের শুরু হতে আমৃত্যু একাজে থাকতে হবে সক্রিয়। হযরত আলী (রা) দশ বছর বয়স হতেই এ আন্দোলনের দাওয়াত পেয়ে বীরের ন্যায় ভূমিকা রেখেছেন। জীবনের খন্ডিত সময়ের জন্য ইসলামী আন্দোলন অবশ্য কর্তব্য মনে করা মুনাফিকির লক্ষণ। ইবনে ওমর (রা) হতে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, পাঁচটি প্রশ্নের সুস্পষ্ট উত্তর ব্যতীত কোন ব্যক্তিই পুলসিরাত চুল পরিমান অতিক্রম করতে পারবে না। প্রথম প্রশ্ন হচ্ছে ‘সামগ্রীক জীবন কিভাবে অতিক্রম করলে?' দ্বিতীয় প্রশ্ন হচ্ছে ‘যৌবনের তারুন্যকে কিভাবে ব্যয় করলে?’
জিহাদ ফি সাবিল্লিাহর কাজের মাধ্যমেই পরকালীন সাফল্যের নিশ্চিত গ্যারান্টি এবং জাহান্নামের ভয়াবহ আজাব হতে নাজাত পাওয়ার সুসংবাদ পাওয়া যায়। সূরা সফ এর -১০,১১,১২ নং আয়াতে এসব কথা বলা হয়েছে।
“যারা ঈমান এনেছ! আমি কি তোমাদেরকে এমন এক বানিজ্যের কথা বলে দেব যা তোমাদেরকে রক্ষা করবে এক যন্ত্রনাদায়ক শাস্তি থেকে?
তা এই যে, তোমরা ঈমান আনবে আল্লাহর প্রতি ও তাঁর রাসূলের প্রতি এবং জেহাদ (প্রচেষ্টা, সংগ্রাম, লড়াই) করবে আল্লাহর পথে তোমদের ধন-সম্পদ ও তোমাদের জীবন দিয়ে। এটাই তোমদের জন্য শ্রেয়, যদি তোমরা জানতে।”
“আল্লাহ ক্ষমা করে দেবেন তোমদের গুনাহসমূহ এবং দাখিল করবেন এমন জান্নাতে, যার নিম্নদেশে প্রবাহিত হবে নহর সমূহ এবং এমন মনোরম গৃহে যা রয়েছে অনন্তকাল বাসের জন। এটাই মহা সাফল্য।”
কোন মুমিন আল্লাহ দ্বীন প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সক্রিয় না হওয়া মানে বাতিল তথা তাগুতী শক্তিকেই সহযোগিতা করা হয়। এর ফলে তার মৃত্যু হবে মুনাফিকীর মৃত্যু এবং তাদের উপর আল্লাহ বিজাতীয় শাসন চাপিয়ে দিবেন। সূরা তাওবার ৩৯ সং আয়াতের বলা হয়েছে- “যদি তোমরা অভিযানে বের না হও, তবে তিনি তোমাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি দিবেন এবং অপর জাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোনই ক্ষতি করতে পারবে না।
বক্তারা আরও উল্লেখ করেন, আমরা যারা ঈমানের দাবিদার; তাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়গুলি ভেবে দেখতে হবে। শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ইসলামী আন্দোলনকারী দলকে, মুমিনদেরকে সাহায্য না করে তাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার বা তাদের কর্মকান্ডে বাধা সৃষ্টি করা অনুচিৎ। সূরা সফ'র ১৪নং আয়াতে বলা হয়েছে “হে যারা ঈমান এনেছ! তোমরা আল্লাহর দ্বীনের সাহয্যকারী হয়ে যাও..”।