নিজস্ব প্রতিবেদক: কুমিল্লার লাকসামের আউশপাড়া দরবার শরীফের পীর আলহাজ মাওলানা আবু তাহেরের (৯৭) দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) বাদ আসর আউশপাড়া ফাজিল মাদ্রাসার মাঠে অনুষ্ঠিত নামাজে জানাযায় হাজারো মুসুল্লি ও ভক্তদের সমাগম ঘটে। সোমবার (২১ এপ্রিল) দিবাগত রাত সাড়ে ৪টায় লাকসাম সুরক্ষা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সর্বজন শ্রদ্ধেয় এ আলেম ইন্তেকাল করেন (ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজেউন)। মৃত্যুকালে তিনি ৫ ছেলে ৬ মেয়েসহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। মাওলানা আবু তাহের দীর্ঘদিন বার্ধক্য জনিত রোগে ভুগছিলেন।
আলহাজ্ব মাওলানা আবু তাহের হুজুর আউশপাড়া দরবার শরীফে পীর ও আউশপাড়া ফাজিল ডিগ্রি মাদ্রাসা সাবেক ভাইস প্রিন্সিপাল এবং আউশপাড়া শরীফ-আছাদ কাদেরিয়া এতিমখানা মাদ্রাসার পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
আউশপাড়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা আবু তাহের প্রকাশ বড় হুজুরের জানাযায় কুমিল্লার বরুড়া, লালমাই, নাঙ্গলকোট, মনোহরগঞ্জ এবং চাঁদপুরের শাহরাস্তি, হাজীগঞ্জসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলার মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, আলেমসহ হাজারো সাধারণ মানুষ অংশ নেন। এ সময় মাদরাসা আশপাশের রাস্তায় দাঁড়িয়ে মানুষ জানাজায় অংশ নেন।
মাওলানা আবু তাহেরের বড় ছেলে মাওলানা খাজা আমিমুল এহছান জানাযায় ইমামতি করেন। জানাযা শেষে মাওলানা আবু তাহেরের ইচ্ছে অনুযায়ী এতিমখানা মাদরাসার কবরস্থানে তার স্ত্রীর কবরের পাশেই তাকে দাফন করা হয়।
স্থানীয় সুত্রে জানা যায়, লাকসাম উপজেলার মুদাফরগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের আউশপাড়া গ্রামে ইসলামি আরবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামে ১৯৩১ সালে প্রায় ২১ শতক সম্পত্তি দান করেন প্রখ্যাত আলেম মৌলভী শরীফ উদ্দিন। ওই সম্পত্তির মধ্যে ইসলামি আরবি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের নামকরণ করা হয় আউশপাড়া মাদ্রাসা। সেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন মৌলভী শরীফ উদ্দিন। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আউশপাড়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা নামে পরিচালিত। মৌলভী শরীফ উদ্দিনের মৃত্যুর পর তার দুই ছেলে মাওলানা আবু তাহের ও পোস্ট মাষ্টার হাশেম উদ্দিন ও তাদের স্বজনদের সিদ্ধান্তে মৌলভী শরীফ উদ্দিনকে মাদ্রাসার পশ্চিম পাশে দাফন করা হয়। ওই স্থানটি শরীফ উদ্দিনের মাজার নামে সমধিক পরিচিত। প্রতি বছর ওই মাজারে ওরশ মাহফিল করা হয়। এ মাজারের খাদিম ছিলেন মরহুম মৌলভী শরীফ উদ্দিনের বড় ছেলে মাওলানা আবু তাহের। এছাড়াও আউশপাড়া ফাজিল মাদ্রাসার ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেন।
২০০০ সালে তিনি অবসরে যাওয়ার পর থেকে আউশপাড়া শরীফ-আছাদ কাদেরিয়া এতিমখানা পরিচালনা করে আসছেন। এ অঞ্চলের আলেমদের কাছে তিনি ছিলেন ‘বড় হুজুর’ নামে পরিচিত ছিলেন।
মরহুমের জানাযায় কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ একেএম সরওয়ার উদ্দিন ছিদ্দিকী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ নুর উল্লাহ রায়হানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সামাজিক নেতৃবৃন্দ, ওলামায়ে কেরাম, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ অংশগ্রহণ করেন।